খাদ্য পানীয়জীবনধারাব্যাবসা

সামুদ্রিক শৈবালের রপ্তানি সম্ভাবনা

সামুদ্রিক শৈবালের রপ্তানি সম্ভাবনা নিয়ে আজকের আর্টিকেল। ছবির পন্যটির প্রতি টনের মূল ১৬০০০ ইউএস ডলার (তথ্য ফ্যালকন ইন্ট্যারন্যাশনাল)। এক দেখায় হয়ত অনেকে পন্যটি না চিনে থাকতে পারেন, তবে নাম বললে সবাই চিনবেন। এটা Seaweed বা সামুদ্রিক শৈবাল।

সামুদ্রিক শৈবালের মার্কেট ভ্যালু

এই সামুদ্রিক শৈবালের রপ্তানি সম্ভাবনা এত বেশী যে আপনি চিন্তা ও করতে পারছেন না। টিবিএস এর একটা রিপোর্ট অনুযায়ী ২০২৬ সালে ‌এর মার্কেট ভ্যালু হবে ৮৬ বিলিয়ন ডলার।

এমন কোন সেক্টর নাই যেখানে ‌এটার ব্যবহার নাই। বিশ্বব্যাপী শৈবাল থেকে খাদ্যপণ্য থেকে শুরু করে ঔষধিপণ্য, প্রসাধনী পণ্য, সার, বায়ো ফুয়েল ও পরিবেশ দূষণরোধক পণ্য উৎপাদন করছে। এমনকি সামুদ্রিক শৈবাল সমুদ্রের পানিতে থাকার ফলে কার্বন ডাই অক্সাইড এর পরিমান কমিয়ে দেয়।

বিশেষজ্ঞরা এটা ভবিষ্যত এর ক্রপ হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে। কিছু দিন আগে বিবিসির একটা প্রতিবেদনে দেখলাম বলা হচ্ছে যেহেতু সারা বিশ্বে জমির পরিমাণ এবং উৎপাদন কমে যাচ্ছে তাতে এটাকে ভবিষ্যতে এর খাবার হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া যায়।

সামুদ্রিক শৈবালের তৈরি খাদ্যগুলো কি

এখন যদি এটা দিয়ে তৈরী কৃত খাবারের বর্ননা দিই তাহলে চোখ কপালে উঠার মত হবে। সবার পছন্দের আইসক্রিম ‌থেকে শুরু করে নুডলস জাতীয় খাবার, স্যুপ জাতীয় খাবার, সবজি জাতীয় খাবার, ফাস্ট ফুড জাতীয় খাবার, শরবত, সল্টেস দুধ, ফিশফিড, পোলট্রিফিড, সামুদ্রিক সবজি কি এমন তৈরীতে ব্যবহার হচ্ছে না শৈবাল। এসব খাবার তৈরি ছাড়াও এগারএগার, কেরাজিনান, এলগ্যানিক এসিড, ক্যালসিয়াম মূল্যবান দ্রব্য ও উৎপাদন হয়।

ঔষধ শিল্পে সামুদ্রিক শৈবালের ব্যবহার

ঔষধ শিল্পের এন্টি ডায়াবেটিকস ঔষধ, খাদ্য সংরক্ষণের জন্য, ল্যাবরেটরিতে ব্যাকটেরিয়া উৎপাদনের জন্য, চকলেটের উপাদান কোকোর বিকল্প হিসেবে, ক্যান্সারের ওষুধ, গ্যাসট্রিকের ওষুধ তৈরিতে ক্যারাজিনানের বহুবিদ ব্যবহার ছাড়াও ক্যালসিয়াম ট্যাবলেট শৈবাল থেকে তৈরি করা যায়।

শৈবাল থেকে আরও কি কি করা যায়

এমনকি সিউইড বা শৈবালের ৫টি প্রজাতী থেকে গাড়ির ও বিদ্যুতের জ্বালানি হিসেবে বায়োফুয়েল, বায়োইথানল, বায়োহাইড্রোকার্র্বন, বায়োহাইড্রোজেন যা দিয়ে হেলিকপ্টারের জ্বালানি তৈরি করা যায়। এসবের উচ্ছৃষ্ট থেকে বায়োগ্যাস তৈরি হয়। এর উচ্ছৃষ্ট থেকে জৈবসারও তৈরি করা যায়।

আমার জাপানিজ বন্ধু জানালো তাদের খাদ্য তালিকায় নাকি প্রতিদিন এটা থাকে। খাদ্য তালিকার কথা বাদ দিয়ে যদি এবার রপ্তানি পরিসংখ্যান বলি। ইন্দোনেশিয়ার প্রধান রপ্তানি আইটেম হল সামুদ্রিক শৈবাল তবে চীন সামুদ্রিক শৈবাল রপ্তানিতে শীর্ষে রয়েছে। তাদের রপ্তানির পরিমাণ মোট রপ্তানির ৫০ শতাংশ এবং ইন্দোনেশিয়ার ৩৫ শতাংশ।

সামুদ্রিক শৈবাল থেকে রপ্তানি আয়

আর আমাদের বাংলাদেশের ওমর হাসান ভাই ২০০৮ সাল থেকে গবেষণা করে এসে ২০১৫ সালে প্রথম এক টন রপ্তানি করেন। এরপর উনার রপ্তানি একটু একটু করে বেড়েছে লাস্ট ২০২২ সালের জানুয়ারি মাসে একটা প্রোগ্রামে উনি বলেছেন উনার টার্গেট ১০ হাজার টন রপ্তানি ।ওমর ভাই লেখার প্রথমে মূল্য তালিকা দেওয়া ফ্যালকন ইন্ট্যারন্যাশনাল ‌এর ফাউন্ডার। এছাড়া এক আপুর তথ্য পেলাম যিনি রপ্তানির সাথে জড়িত। আমাদের পার্শ্ববর্তী দেশ ইন্ডিয়ার কেরেলা থেকেও এটা রপ্তানি হচ্ছে।

বিশ্বব্যাপি শৈবালের চাহিদা

বিশ্বব্যাপী শৈবালের যে পরিমাণ চাহিদা তাতে প্রতিযোগিতার পরিমাণ সীমিত বলা যায়। বিভিন্ন তথ্যমতে এই শৈবাল চাষ ও করা যায়। এমনকি চাষ করার ২০-২৫ দিন পর থেকেই এটা আহরন করা যায়। এটা চাষে জন্য কোন পরিমাণ সারের প্রয়োজন হয় না। এক কথায় একা একাই বেড়ে উঠে।

সামুদ্রিক শৈবালের বায়ার কোন কোন দেশ

আমদানীর দিক থেকে চায়না, জাপান, কানাডা, অস্ট্রেলিয়া, ই‌এসএ সহ বেশ কয়েকটি দেশ এর প্রধান আমদানী কারক ।এমনকি আমাদের স্কয়ার ফার্মাসিটিউক্যাল শৈবাল আমদানী করে থাকে বিভিন্ন দেশ থেকে।

এর এত এত চাহিদা, এত এত বৈচিত্র্য পন্য যে ভাবেই হোক আমাদের এ সেক্টর ডেভলপ করা উচিত। ওমর হাসান ভাইয়ের মত আরও তরুন দের এগিয়ে আসা উচিত কারন এ সেক্টর প্রচুর সম্ভাবনাময়। আর এই সম্ভাবনাময় সেক্টরে এগিয়ে আসতে পারলে যাদের প্রধান আয়ের উৎস ছিল মৎস শিকার তারা অন্তত দ্বিতীয় একটি আয়ের উৎস পাবে।

সামুদ্রিক শৈবাল নিয়ে লিখলে আরও অনেক তথ্য এড করা যায় তবে লেখা বড় হয়ে যাওয়াই কি পয়েন্ট গুলো তুলে ধরার চেষ্টা করেছি। তব‌ে শেষ করব একটি বিগ ইনফরমেশন দিয়ে… আমাদের সমুদ্রে ক্লোরেলা শৈবাল নামক এক ধরনের শৈবাল পাওয়া যায়, যার পাউডার অবস্থায় ১ কেজি ক্লোরেলার মূল্য ৩,৮০০০০ টাকা। সো বিগ ইন্ডাস্ট্রি একটা সামুদ্রিক শৈবালের রপ্তানি সম্ভাবনা

দেশের রপ্তানী, বাড়বে আগামীদিনের একেকজন উদ্যোক্তা একেকজন এক্সপোর্টার হয়ে দেশের জন্য অবদান রাখবে। এটাই কামনা করছি।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button